আইডিয়াঃ “ আয়কর ই-রিটার্ন সেবা”
নাগরিক সেবা
প্রদানের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে সরকারকে প্রচুর অর্থ ব্যয়
করতে হয়।এই প্রয়োজন মেটানোর জন্য সরকার বৈদেশিক এবং দেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদ
ব্যবহার করে থাকে। অভ্যন্তরীণ সম্পদ যে সকল উৎস হতে সংগৃহীত হয় তাদের মধ্যে অন্যতম
প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ উৎস হলো আয়কর।
১৮৭টি ধারা এবং ৭টি
তফসিল নিয়ে আয়কর আইন “আয়কর অধ্যাদেশ-১৯৮৪”।করের হার এবং আয়কর
আইনের বিভিন্ন বিষয় সংশোধনের জন্য সরকার প্রতিবছর সংশোধনী জারী করেন যা অর্থ আইন
নামে পরিচিত। এরূপ পরিবর্তন আয়কর অধ্যাদেশ ও আয়কর নিয়মাবলীর পরিবর্তন হিসেবে
বিবেচিত হওয়ায় আয়কর সংক্রান্ত নিয়ম-কানুন বেশ জটিল।যা অনেক করদাতার পক্ষে সহজে
বোঝা সম্ভব হয় না।ফলে সঠিক করদায় হিসাব করে কর নির্ণয় অনেক সময়ই সম্ভব হয়
না।ক্ষেত্র বিশেষে কর্মঘন্টা ও অর্থ অপচয় হয় এবং হয়রানীর শিকার হতে হয়।আইন
সম্পর্কে সাধারণ ভয়, ভোগান্তির আশঙ্খা, অবস্থানগত ও কৌশলগত এবং পারিপার্শ্বিক
কারণে করদাতার “কর ভীতি” জন্ম নেয়।‘কর ভীতি’র কারণে করদাতাগণ তৃতীয় পক্ষের আশ্রয় গ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ ট্যাক্স
পেয়ার্স সোসাইটি’র তথ্যানুযায়ী- “কিছু
অসৎ কর্মকর্তাদের যোগসাজসে দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে কর দেওয়ায় হয়রানি ও
নির্যাতন শিকার হয়ে ৮০ ভাগ ব্যক্তি কর দিতে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।
এতে সরকার রাজস্ব আহরণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।”
তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে
ত্রুটিযুক্ত রিটার্ন দাখিলের ফলে- দাখিলকৃত রিটার্নের ৩০-৩৫% রি-ওপেন বা অডিটে ঝামেলায়
পড়ে।রিওপেন বা অডিট নিষ্পত্তি করতে করদাতাকে আবার তৃতীয় পক্ষের বা পক্ষগণের
দ্বারস্থ হতে হয়।করদাতাকে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে অডিট নিষ্পত্তি করতে
গুণতে হয় অতিরিক্ত অর্থ ।এক্ষেত্রেও লাভবান হয় তৃতীয় পক্ষ বা পক্ষগণ, যৎ সামান্য
কর বা জমিরানা রাজস্বখাতে জমা হয়।হয়রানীর শিকার হতে হয় সম্মানিত করদাতাগণকে।
ই-ফাইলিং - জাতীয় রাজস্ববোর্ড
অনলাইন এ আয়কর রিটার্ন দাখিলের জন্য ‘ই-ফাইলিং’ ব্যবস্থার
প্রবর্তন করেছে। যা অনলাইনে করদাতা কর্তৃক প্রদত্ত আয়-ব্যয়, বিনিয়োগ, কর ইত্যাদি
তথ্য থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪ অনুযায়ী করদাতার মোট আয়, প্রদেয় কর
ইত্যাদি নির্ধারণ করে দেয়। ভূল তথ্য সিস্টেমে প্রদান করলে অনলাইনে দাখিলকৃত
রিটার্নটি অগ্রহণযোগ্য হবে। ই-ফাইলিং সিস্টেমটি সময়োপযোগী। বর্তমানে
বাংলাদেশে প্রায় ২৫ লক্ষ করদাতা রয়েছে। আশার কথা বর্তমান সরকারে গৃহীত যুগান্তকারী
পদক্ষেপের কারণ করদাতার সংখ্যা অতিদ্রুত প্রায় ৮০ লক্ষে পৌঁছাবে। করদাতাগণের
ই-ফাইলিং কার্যক্রমে সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে করদাতার ‘করভীতি’ দূর
করতে পারলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবে।
ই-ফাইলিং ক্ষেত্রে
করদাতার দিক থেকে সমস্যা সমুহ - কর আইন না জানা, আইনের পরিবর্তনসমুহ না জানা, হিসাব-নিকাশের প্রতি
দূর্বলতা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি জ্ঞান প্রয়োগে অনীহা।স্থান ভেদে কানেক্টিভিটি
সমস্যা। পরিবর্তিত পরিস্থিতি সাথে নিজেকে মানিয়ে না নেওয়া।
ই-ফাইলিং ক্ষেত্রে কর
অফিস এর দিক থেকে সমস্যা সমুহ - ই-ফাইলিং নিরুৎসাহিত করা, ই-ফাইলিং এর জন্য ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড
প্রদানে অনীহা, কৌশলে করদাতাকে ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড প্রদান করা থেকে বিরত থাকা,
পূর্বের নিয়মে তথা অফলাইনে রিটার্ন প্রদানের পরামর্শ প্রদান করা, ডিজিটাল
প্রযুক্তিকে গ্রহণে অনীহা।
সমাধান পত্র (সংক্ষিপ্ত)
অনলাইন ফাইলিং সিস্টেমে
আয়কর রিটার্ন দাখিলের জন্য একটি “ আয়কর
ই-রিটার্ন সেবা” কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। সেবাকেন্দ্রটি হবে আধুনিক তথ্য ও
প্রযুক্তি নির্ভর।
সেবাকেন্দ্রের সদস্যগণ
হবেন – ‘তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ জ্ঞান সম্পন্ন’,
কর আইনের প্রয়োগ জ্ঞান সম্পন্ন, গাণিতিক হিসাব-নিকাশে পারদর্শী,
আয়কর রিটার্ন ই-ফাইলিং এর ক্ষেত্রে প্রশিক্ষিত, সেবা প্রদানে সৃজনশীল।
সেবা কেন্দ্রের মূল কাজ – করদাতার আস্থা অর্জন, রিটার্ন ই-ফাইলিং করা এবং সার্টিফিকেট সংগ্রহ
করে করদাতাকে প্রদান করা।
করদাতার আস্থা অর্জন- কর আইনের বিধানসমুহ সহজভাবে করদাতার নিকট উপস্থাপন, কর ব্যবস্থার
মৌলিক বিষয় যেমন কর নিবন্ধন, আয়কর রিটার্ন ফরম পূরণ, মোট আয় নিরুপন, করদায়
পরিগণনাসহ কর পরিপালন-সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ সকল বিষয় সর্ম্পকে ধারণা প্রদান,
নির্দেশনা অনুসরণের মাধ্যমে নতূন করদাতাগণ নিজেই তাঁর রিটার্ন পূরণ ও প্রদেয় কর
পরিশোধ করতে সক্ষম হবেন, জাতীয় জীবনে রাজস্ব-বান্ধব সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে
করদাতাগণের সাথে সম্প্রীতির সম্পর্ক সৃষ্টি, সর্বাধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির অধিকতর
ব্যবহারের মাধ্যমে করদাতাগণের সার্বিক সন্তুষ্টি অর্জন এবং সততার সাথে কর্ম
সম্পাদনের মাধ্যমে করদাতাগণের বিশ্বাস অর্জন করা, মহিলা করদাতা, প্রতিবন্ধী ও
জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ।
ই-ফাইলিং এবং
সার্টিফিকেট সংগ্রহ- করদাতার প্রদত্ত তথ্য
সর্বশেষ সংশোধিত আইন অনুযায়ী বিশ্লেষণ করা হবে।ই-ফাইলিং এর জন্য আয়কর রিটার্নের
ড্রাফট প্রস্তুত করা হবে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নির্ধারিত ইলেকট্রনিক রিটার্নে
আয়-ব্যয়, বিনিয়োগ, কর প্রদান ইত্যাদি প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করে সফটওয়্যারের
মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ অনুযায়ী করদাতার মোট আয়, প্রদেয় কর
ইত্যাদি তথ্য সম্বলিত আয়কর রিটার্ন (অনলাইন ড্রাফট) প্রস্তুত করা হবে, করদাতার কর
প্রদানে সহায়তা করা হবে / করদাতার পক্ষে কর প্রদান করা হবে, প্রদানকৃত করের
প্রমাণপত্র এবং অন্যান্য দলিলাদি সহ রিটার্ন ই-ফাইলিং করা হবে, দাখিলকৃত রিটার্নের
একটি প্রিন্ট কপি করদাতাকে প্রদান করা হবে, অনলাইনে প্রাপ্ত রিটার্ন
জমাদানের রশিদ প্রিন্ট করে করদাতাকে প্রদান করা হবে, সেই সাথে কর নির্ধারণ সম্পন্ন
হয়েছে মর্মে অনলাইনে সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে করদাতাকে প্রদান করা হবে।
এটি কেন টেকসই – অনলাইন ফাইলিং এর মাধ্যমে আয়কর রিটার্ন দাখিলের জন্য একটি “ আয়কর
ই-রিটার্ন সেবা” কেন্দ্র স্থাপন করা হলে- করদাতা কর প্রদানে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ
করবে।আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এবং সর্বশেষ সংশোধিত আইন অনুযায়ী করদাতার মোট আয়, প্রদেয়
কর ইত্যাদি তথ্য সম্বলিত আয়কর রিটার্ন প্রস্তুত হওয়ায় হয়রানীর আশঙ্খা কমে
যাবে।সফটওয়্যারের মাধ্যমে কর পরিগণনা হওয়ায় গাণিতিক ভূল শূণ্যের কোঠায় নেমে
আসবে।সময় এবং অর্থ অপচয় হ্রাস পাবে। অফিস ভিজিট কমে যাবে। অর্থাৎ TCV হ্রাস
পাবে।তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। অর্থাৎ Service
Process Simplification (SPS) হবে।আইন সম্পর্কে সাধারণ ভয় ও ভোগান্তির আশঙ্খা,
অবস্থানগত, কৌশলগত এবং পারিপার্শ্বিক কারণসমুহ হ্রাস পাবে। সঠিক করদায় পরিগণনার
কারণে রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধি পাবে। ফলে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ ত্বরাণ্বিত হবে।
আমাকে এবং আমার
আইডিয়াকে বাছাই করার পক্ষে যুক্তি – আমার মাধ্যমে ক্ষুদ্র পরিসরে আইডিয়াটি বাস্তবায়িত হলে করদাতাগণ
নির্ভেজালভাবে আয়কর প্রদান করতঃ প্রত্যয়ন সংগ্রহ করতে পারবেন। সনাতন পদ্ধতির
তুলনায় রিটার্ন ই-ফাইলিং এ ঝুঁকি কম থাকায় করদাতার হয়রানী কমবে। ঝামেলা মুক্তভাবে
কর প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। ফলে, আয়কর দাতা বৃদ্ধি পাবে।আয়কর সঠিক পরিগণনার
মাধ্যমে করদাতার কর ও আইন ভীতি দূর হবে।আয়করের মাধ্যমে রাজস্ব সংগ্রহ বর্তমানের
তুলনায় কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে ফলে দেশের বৈদেশিক নির্ভরতা কমে যাবে।২০৪১ সালের অনেক
আগেই বাংলাদেশ উন্নত রাষ্ট্রে উন্নীত হবে।